The English Academy Blog

Behind the success stories

রোগের অজানা রহস্য উন্মোচনের গল্প — Dr. Adnan Mannan


🌟 🎙️ জেনেটিক রহস্য থেকে অনন্য আবিষ্কারের গল্প: Dr. Adnan Mannan এর বিজ্ঞানযাত্রা

রাতের খাবারের টেবিলে পরিবারের সবাই একসাথে বসে আছে। চিকিৎসক বাবা চেম্বার থেকে ফিরেই রোগীদের গল্প বলতেন — কীভাবে অনেক সময় রোগ চিহ্নিত করতে গিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হয়, কারণ তখন বাংলাদেশে জেনেটিক কোড বিশ্লেষণের সুযোগই ছিল না। ছোট্ট মানের কানে প্রতিদিনই বাজত এই গল্পগুলো — আর সেখান থেকেই জন্ম নিলো নতুন এক স্বপ্ন — মানুষকে চিকিৎসা নয়, রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে, দেহের ভেতরের অজানা রহস্য বুঝতে হবে।

চট্টগ্রামের ছেলে মানের পড়াশোনার শুরুটা হয় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। কিন্তু কিছুদিন যেতেই বুঝে ফেললেন — কোড আর কম্পিউটারের ফর্মুলার চেয়ে জীববিজ্ঞানের জটিলতা, দেহের বংশগত রহস্য আর জেনেটিক উপাদানের অজানা গল্পই তাকে বেশি টানে। তাই সাহস নিয়ে বদলে ফেললেন দিক — ভর্তি হলেন বায়োটেকনোলজিতে। তখন দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয় একেবারেই নতুন — হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী, পুরো ব্যাচে মাত্র ৮ জন! অথচ সেই ছোট্ট শুরুই আজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে পৃথিবীর সেরা ল্যাব আর গবেষণার আঙিনায়।

বায়োটেকনোলজি আর বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতক শেষ হতেই মানের মাথায় তখন আরেকটা স্বপ্ন — ইংল্যান্ডে পড়তে যাবেন। হয়তো শৈশবের গল্প, হয়তো বাবা-মার স্বপ্ন — বিলেতের টানে পৌঁছে গেলেন ইয়র্কশায়ারে। সেখানে বায়োমলিকুলার বায়োলজিতে মাস্টার্স শেষ করলেন, কিছুদিন কাজ করলেন ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় (NHS)। অথচ বিদেশের চাকরি, স্বচ্ছল জীবন এসবেই থেমে থাকেননি তিনি। ফিরে এলেন দেশে — কারণ তার আরেকটা পরিচয় ছিল শিক্ষকতা। কলেজজীবন থেকেই সহপাঠীদের পড়ানো, সাংস্কৃতিক সংগঠন আর বক্তৃতা — সবই তাকে তৈরি করেছিল একজন প্রিয় শিক্ষক আর অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তা হিসেবে।

ইংল্যান্ড থেকে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। তবে এখানেই থামেননি — আরও শিখতে, আরও নতুন কিছু করতে পাড়ি জমালেন অস্ট্রেলিয়ায়। আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি শেষ করলেন বায়োমেডিকেল সায়েন্স আর ফার্মাকোলজিতে। গবেষণার কাজে যুক্ত হলেন অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সাথে। কয়েক বছর পর আবারও ফিরে এলেন নিজের মাটিতে — বিশ্বাস নিয়ে, কিছু একটা বদলে দিতে হবে।

এরপর একবার নয়, দু’বার আমেরিকায় গিয়েছেন পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চ করতে — ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি আর জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে। দেশের মাটিতে বসেও দেহের বংশগত উপাদান নিয়ে নতুন নতুন রহস্য উন্মোচন করার স্বপ্ন নিয়ে আজও লড়ে যাচ্ছেন তিনি।

ড. মানের গবেষণার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য — বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ যারা ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে ভুগছেন অথচ জানেনই না কেন হচ্ছে — সেই ‘কারণ’ খুঁজে বের করা। তাঁর ভাষায়, “মানুষের জেনেটিক উপাদান বিশ্লেষণ করলে ছোটবেলাতেই বোঝা যাবে কার ঝুঁকি বেশি। তখনই খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম আর জীবনযাত্রা বদলাতে পারলে বহু রোগ এড়ানো সম্ভব।”

করোনা মহামারির সময় দেশের ভ্যাকসিন গবেষণায়ও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দ্রুত whole genome sequencing, রোগের জেনেটিক গঠন চিহ্নিত করা — এ সবই মানুষকে দ্রুত সুরক্ষা দিতে সহায়ক হয়েছে।

তবে তিনি একাই এসব করেননি। তরুণদের জন্য তৈরি করেছেন Network of Young Biotechnologists of Bangladesh — দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের জন্য এক ছাতার নিচে শেখা, নেটওয়ার্ক গড়া আর দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি-র মতো প্ল্যাটফর্মে তরুণদের শেখাচ্ছেন কীভাবে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হয়, SOP লিখতে হয়, ইমেইল করতে হয় — এমনকি ইংরেজি দক্ষতা কীভাবে বাড়ানো যায়।

ড. মানের বিশ্বাস — ইংরেজি ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে টিকে থাকা মুশকিল। কারণ, সেরা বই, জার্নাল, গবেষণা আর বৈশ্বিক মঞ্চ সবই ইংরেজিতে। তাই তিনি তরুণদের বলেন — “ইংরেজিকে ভয় পেয়ো না। নিখুঁত উচ্চারণের দরকার নেই। দরকার বোঝা আর সঠিকভাবে প্রকাশ করা।”

সবশেষে, আজকের তরুণদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা — “যা ভালোবাসো, সেটাই করো। বিজ্ঞান হোক বা ব্যবসা — নিজের ১০০% দাও। এটা বিজ্ঞানের যুগ — যাকে বলা হয় STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics)। যদি বিজ্ঞান ভালো লাগে, তবে বায়োটেকনোলজি শেখো। এর চেয়ে সুন্দর জীবন বাঁচানো বিজ্ঞান আর কিছু নেই।”

একদিন যে ছেলেটি বাবার কাছে শুনেছিল — “ডাক্তার হবে না, রোগের আসল রহস্য বের করবে” — সেই ছেলে আজ হাজারো তরুণকে শেখাচ্ছে, স্বপ্ন বড় করো, আর সাহস করে ঝুঁকি নাও।

তুমি কি আত্মবিশ্বাসের সাথে ইংরেজি বলতে চাও?

তাহলে আজই যোগাযোগ করো